Blog
**কারিগরি শিক্ষা – কি এক ভয়ংকার ফাঁদ?**
- September 29, 2018
- Posted by: Towhid Siddiki
- Category: Blog
মামুন অংকে কাঁচা, তাই যখন ক্লাস এইট থেকে নাইন এ উঠল তখন সাইন্স না নিয়ে কমার্স নিল । হাফ ছেড়ে বাঁচল।
মামুনের বন্ধু রাফি নিল আর্টস আর ওদের দুজনের বন্ধু সজিব নিল সাইন্স।
তিনজনের তিন ধরনের লেখাপড়া শুরু হল । ঠিক দুই বছরের মাথায় তাদের এসএসসি এক্সাম হয়ে গেল। মোটামুটি সবাই ৪.০০-৪.৫০ এর মধ্যে রেসাল্ট করল ।
এলাকার মুরুব্বি জামান সাহেব ওদের বাবা-মাকে বল্লেন যেহেতু ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পড়া অনেক খরচ তারপরে আবার ইউনিভারসিটিতে পড়তে হবে , তারপরে চাকরি বাকরি । অনেক সময় এবং টাকা পয়সা খরচ হয়ে যাবে। এর চাইতে ভাল এখনি ৪ বছরের ডিপ্লোমা করে সাথে সাথে চাকরিতে ডুকে যাবে তারপর সময় সুজোগ বুজে বিএসসি টা করে নিবে । অন্যসবাই যখন লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তখনি ওরা ইনকাম শুরু করবে । আর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দের তো অনেক কদর আর বেতনও ভাল। আর এখন শুনছি অনেক বৃত্তিও পায় ।
জ্ঞানী মানুষের এহেন ভাল কথায় কান দিয়ে তারা তিনজনেই ভর্তি হল ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার -এ।
তিঞ্জনেই খুশি আর কয়েকদিন পরেই তারা ইঞ্জিনিয়ার হতে যাচ্ছে । প্রথম সেমেস্টার শুরু হয়ে গেল । ঢাকায় বাসা ভারা নিয়ে শুরু হল তাদের ঢাকার ছাত্রজীবন । নতুন জীবন সবকিছুই নতুন । ফাস্ট ফুড থেকে শুরু করে মেয়েদের সাথে খোলাখুলি কথা বলা সবকিছুই কেমন জানি অন্যরকম । এর মধ্যে স্যার রাও অন্যরকম কেমন জানি মেপে মেপে কথা বলে । যাই হোক ভালই লাগছে তাদের । হটাত তাদের সামনে হাজির হোল মিড টার্ম নামক এক পরিক্ষা । পরীক্ষায় সাবজেক্ট ইরেজি, ম্যাথ, ফিজিক্স, কেমেস্ত্রি, বাংলা, আরও ডিপারট্মেন্টাল সাবজেক্ট তো আছেই।
সজিবের এই বিষয় গুলো নিয়ে কোন মাথা ব্যথাই নেই কারন এইগুলা সবগুলাই সে মোটামুটি স্কুল- এ পড়ে
এসেছে । এইজন্য ক্লাসে স্যাররা যা পড়িয়েছেন তা ঝুব সহজেই সে বুজতে পেরেছে । এখন খালি একটু পরলেই সে এইগুলা পারবে।
বিপত্তি ঘটল মামুন এবং রাফির, তারা তো এই পড়েলেখার আগা মাথা কিছুই বুজে না, আবার লজ্জায় কিছু বলতেও পারে না । কি আর করার অনেক চেস্টার পরেও তারা মিড টার্ম এ চার সাবজেক্ট এ ফেল। ব্যাপার না । সেমিস্টার ফাইনালে ফাটাইয়া এক্সাম দিয়া দিবে । কিন্ত সেমিস্টার ফাইনালেও ফেল , আবার রি টেক । কলেজ থেকে বাসায় কল দিয়া বলা হল ওরা দুইজন তো কোন পড়ালেখাই করে না। কিভাবে পাস করবে । বাসা থেকে ওদের বলা হল বাবা একটু মনোযোগ দিয়া পড়ালেখা কর ।
কিন্তু ২য় এবং ৩য় সেমিস্টারেও একই অবস্থা হয় ।পরিনামে প্রায় দুই বছর পড়েও তারা এই ডিপ্লোমা পড়ালেখার ক্ষান্ত দিতে বাধ্য হয়।
আমাদের একটু চিন্তা করা উচিৎ যেই ছেলেগুলো একমাত্র ম্যাথ, ফিজিক্স, কেমেস্ত্রি- এর ভয়ে কমার্স এবং আর্টস বিভাগে পড়েছিল তাদের কে কেন আমরা আবার সেই সাবজেক্ট গুলো পড়তে বাধ্য করলাম । তাদের কি দোষ তারা তো এইগুলা পড়তে চায় এই নাই । কিন্তু আমরাই তাদের ঠেলে দিলাম এই ব্যর্থতার পথে।
আমাদের দেশের কারিগরি শিক্ষাবোর্ড-এর এই ফাঁদে আমাদের দেশের মধ্যবর্তী পরিবারগুলো খুব সহজেই পা দিচ্ছে । আর তাদের পরিবারে যোগ হচ্ছে এক একটি ব্যর্থতার গল্প।
কারিগরি শিক্ষাবোর্ড-এর সিলেবাস একজন কমার্স বা আর্টসের ছাত্রের জন্য কোন ভাবেই প্রযোজ্য না । খুব তারাতারি ইহা পরিবর্তন করা জরুরি। না হলে দেশ অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে ।